অ্যানড্রয়েড ফোন রুট করা এক সময় অনেকটা কঠিন ব্যাপার ছিল তবে বর্তমানে রুট করাটা অনেকটাই সহজ বিষয় হয়ে গিয়েছে। আজ ৩ টি উপায়ে অ্যানড্রয়েড ফোন রুট করার কৌশল দেখাবো। তিনটির মধ্যে একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হবে এবং বাকী দুটি পদ্ধতি কম্পিউটার ছাড়া হবে। এই তিনটি পদ্ধতি খুব সহজ এবং বর্তমান সময়ের জন্য অনেকটাই নিরাপদ। যার যার ইচ্ছামত কম্পিউটার অথবা মোবাইলের মাধ্যমে আপনি আপনার অ্যানড্রয়েড ফোনটি-কে রুট করতে পারবেন।
যাদের ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপ নেই তারা চাইলে মোবাইলের দিয়েও রুট করতে পারবে। আর যাদের কম্পিউটার আছে তারা ইচ্ছা করলে তিনটির মধ্যে যে কোন একটি প্রক্রিয়ায় রুট করে নিতে পারবেন। সকলের চাহিদার কথা বিবেচনা করে একসাথে এই পদ্ধতিগুলো দেওয়া হলো। তবে যাদের কম্পিউটার আছে তারা অবশ্যই এর মাধ্যমে রুট করে নিতে চেষ্টা করবেন। এর কারণ হলো কম্পিউটার এর মাধ্যমে রুট করা সবচেয়ে নিরাপদ এবং সহজ ।
রুট কি?(What is root?)
রুট করার আগে চলুন জেনে নিই রূট আসলে কি? সহজভাবে বললে, আপনার ফোনের সকল পারমিশন আপনার হাতে চলে যাওয়া। বুঝলেন না তো! ওকে বুঝিয়ে বলছি। একটি ফোনকে যখন আপনি রুট করবেন তখন ফোনটি চালানোর জন্য আপনাকে কোনো বাধ্যবাধকতা মানতে হবে না। যেমন ধরুন, আপনি কোনো অ্যাপ ব্যবহার করবেন কিন্তু ফোন থেকে পারমিশন পাচ্ছেন না। কিন্তু আপনি যদি আপনার ফোনটিকে রূট করেন তাহলে আপনি খুব সহজেই সেই অ্যাপটি বিনা পারমিশনে চালাতে পারবেন। আশা করি এখন আপনাকে বুঝাতে পেরেছি।
এন্ড্রয়েড ফোন রুট করার আগে কি করতে হয়?(What to do before rooting Android phone?)
আপনার হাতের অ্যানড্রয়েড ফোনটি রুট করার পূর্বে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। কারন তা না হলে ফোন রুট করার ফোন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মোবাইল হুটহাটভাবে রুট না করে রুট করার আগে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করে অতঃপর মোবাইল রুট করার পরামর্শ রইল।
এন্ড্রয়েড মোবাইল রুট এর সিস্টেম ভালোভাবে না জেনে রুট করার চেষ্টা করবেন না। কারণ আপনার অভীজ্ঞতার অভাবে মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম নস্ট হয়ে যেতে পারে। অপারেটিং সিস্টেম নস্ট হলে ফোন ফ্লাশ না করে ঠিক করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
মোবাইল রুট করার পূর্বে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৮০% চার্জ করে নিবেন। কারণ রুট করার সময় অনেকটা চার্জের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
কম্পিউটার দিয়ে রুট করার ক্ষেত্রে ভালো মানের ডাটা ক্যাবল ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
কম্পিউটারের ইউএসবি পোর্টটি সঠিকভাবে কাজ করে কিনা তা যাচাই করা খুবই গুরত্বপূর্ণ। কারণ ফোন রুট করার সময় ক্যাবল নাড়াচাড়া হলে রূত বমধ হয়ে ফোন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আপনার কাঙ্খিত ফোনের ড্রাইভার অবশ্যই ডাউনলোড করে পিসিতে ইনস্টল করতে হবে।
ফোন মেমোরিতে যদি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকে তবে তা External Memory Card এ রাখলে ভালো হবে।
এন্ড্রয়েড ফোন রুট করার সুবিধা কি?(What are the advantage of rooting Android phone?)
মোবাইলের গতি ও পারফরমেন্স বৃদ্ধি করা যায়।
ফোনের সিস্টেম অ্যাপগুলো সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চাইলে যেকোন সিস্টেম অ্যাপ অনায়াসেই ডিলিট করা যায়।
বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ার ব্যবহার করে ফোনের অস্থায়ী ফাইল ডিলিট করে ফোনের গতি বৃদ্ধি করা যায়।
যেকোনো বিশেষ কাজের প্রয়োজন হলে প্রসেসরের গতি বৃদ্ধি করা যায়।
অপ্রয়োজনীয় বা আনইউজড অ্যাপস বন্ধ রেখে ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো যায়।
নানান ধরনের কাস্টম মডিউল ব্যবহারের মাধ্যমে হাতের ফোনটিকে ইচ্ছামত ডিজাইন করা যায়।
মোবাইলে ইচ্ছেমত কাষ্টম ফন্ট ইনস্টল করতে পারবেন।
মোবাইলে যেকোন Patch, Crack ও Hacking Scripts ব্যবহার করতে পারবেন।
এন্ড্রয়েড ফোন রুট করার অসুবিধা কি কি?(What are the disadvantage of rooting Android phone?)
ফোন রুট করলে ফোনের আর ওয়ারেন্টি থাকবে না। তাই রুট করার আগে এ বিষয়েটি বিবেচনা করবেন।
ফোন রুট করলে মোবাইল কাজ করার ক্ষমতা হারাতে পারে। এ ক্ষেত্রে ফ্লাশ দিয়ে আবার ঠিক করতে হবে।
রুট করার পর ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট পাওয়া যাবে না। কারণ OTA আপডেট করার সময় Error ম্যাসেজ দেখাবে।
রুট করলে ফোনে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ফোন রুট করলে ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আনলক হয়ে যায়।
না বুঝে সঠিকভাবে মোবাইল রুট না করলে রুট করার সময় ফোন নস্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
->আরও পড়ুন
এন্ড্রয়েড ফোন রুট করার নিয়ম(Rules to root Android phone)
আমরা আগেই বলেছি আজকের পোস্টে মোট ৩ টি উপায়ে রুট করার নিয়ম আপনাদের দেখাব। প্রয়োজন অনুসারে যে পদ্ধতিতে নিরাপদ মনে হবে সেই নিয়ম অনুসরণ করেই রুট করা যাবে। যাদের কম্পিউটার আছে তারা আবশ্যই ১ম পদ্ধতিতে রুট করে নেবেন। কারণ এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ নিরাপদ অর্থাৎ মোবাইল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি খুব কম। তাহলে আর সময় নষ্ট না করে ফোন রুট করার নিয়মগুলো দেখে নেই।
প্রথম পদ্ধতি – কম্পিউটারের মাধ্যমে রুট(Root via computer)
এ পদ্ধতিতে অ্যানডয়েড এর যে কোন ভার্সনের মোবাইলকে রুট করতে পারবেন। এটি Android-11 ভার্সন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে রুট করতে সক্ষম। মোবাইল রুট করতে এই সফটওয়ারটি কোন কোন মডেলের ডিভাইস সাপোর্ট করছে সে বিষয়ে তাদের অফিসিয়াল সাইট থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। তাদের সেই তালিকা থেকে জানতে পারবেন যে আপনার ডিভাইসটি রয়েছে কি না।
- প্রথমে Kingo Android Root অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপে ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন।
- ইনস্টল করার পর সফটওয়ারটি রান করলে নিচের ছবির মতো দেখাবে।
- এখন আপনার অ্যানড্রয়েড ফোনটি USB ক্যাবল এর মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করুন। মোবাইল কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করার পর নিচের ছবির মতো দেখাবে।
- এখানে আপনার ফোনটি রুট করার আগে সফটওয়ারটি অটোমেটিকভাবে রুট করার দরকারি সকল ড্রাইভার ইনস্টল করে নিবে। তবে এর জন্য আপনার কম্পিউটারটিকে অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশনের সাথে যুক্ত থাকতে হবে।
- উপরের ছবির ড্রাইভার ডাউনলোড শেষ হওয়ার পর নিন্মের ছবি দেখাবে।
- উপরের ছবিটি দেখার পর আপনার মোবাইল ফোনটি কম্পিউটার থেকে Disconnect বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিবেন। সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার পাঁচ সেকেন্ড পর আবার মোবাইলটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করবেন।
- উপরের ছবিটি আপনার মোবাইলের ইউএসবি ডিবাগিং(USB Debugging) অন করার অপশন করে দিবে। কম্পিউটারের মাধ্যমে অন করতে না পারলে নিচের পদ্ধটি অনুসরণ করতে পারেন।
- এখানে আপনার মোবাইলের ডেভেলপার অপশন(Developer Options) অন করে এনেবল ইউএসবি ডিবাগিং(Enable USB Debugging) এ টিক চিহ্ন দিতে হবে। এটি করতে আপনার ফোনের সেটিংস(Settings) থেকে ডেভেলপার অপশন(Developer Options) যেতে হবে।
- সবশেষে রুট(Root) বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার ফোনটি রুট হতে শুরু করবে।
- উপরের ছবিতে ১০০% পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। রুট প্রক্রিয়াটি ১০০% হওয়ার জন্য ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক ভেদে ৫/৭ মিনিট সময় নিতে পারে।
- রুট কমপ্লিট বা শেষ হওয়ার পর উপরের ছবির মতো সাকসিড(Succeed) ম্যাসেজ দেখাবে।
- তারপর আপনার ফোনটিকে রিস্টার্ট দিন। ব্যাস খুব সহজেই আপনার ফোনটি রুট হয়ে গেল।
দ্বিতীয় পদ্ধতি – মোবাইলের মাধ্যমে রুট(Root via Mobile)
বিগত বেশ কয়েক বছর Kingo Root দিয়ে শুধুমাত্র কম্পিউটার এর মাধ্যমে অ্যানড্রয়েড মোবাইলকে রুট করা যেত। কিন্তু গত ৩/৪ বছর যাবৎ Kingo Root মোবাইলের জন্য Apk ভার্সন বের করেছে। এতে করে যাদের কাছে কম্পিউটার নেই তারাও এই অ্যাপটি দিয়ে সহজে অ্যানড্রয়েড মোবাইলটি রুট করে নিতে পারবেন।
- প্রথমে এখানে ক্লিক করে Kingo Root অ্যানড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করুন।
- তারপর অ্যাপটি Install করে Open করলে নিচের ছবির ন্যায় দেখতে পাবেন। (এই প্রক্রিয়ায় অবশ্যই মোবাইলের ইন্টারনেট কানেশনটি একটিভ করা দরকার)
- এখন উপরের ছবিতে দেখানো নীল রঙের One Click Root বাটনে ক্লিক করলে নিচের ছবির মতো রুট হওয়া শুরু করবে।
- এই পর্যায়ে আপনাকে কিছুই করতে হবে না। শুধু রুট না হওয়া পর্যন্ত কিছু সময় অপেক্ষা করুন। রুট সম্পন্ন হলে নিচের ছবির মত Success Message দেখাবে।
- এতটুকু ঠিকঠাকভাবে করলেই দ্বিতীয় পদ্ধতিতে আপনার মোবাইলটি রুট হয়ে যাবে।
তৃতীয় পদ্ধতি – মোবাইলের মাধ্যমে রুট(Root via Mobile)
এই পদ্ধতিতে দেখাবো Kingroot অ্যাপ দিয়ে কিভাবে মোবাইলের মাধ্যমে খুব সহজে রুট করবেন। Kingo Root এবং Kingroot দেখতে প্রায় এক রকম লাগলেও একটু মনোযোগ সহকারে দেখলে নামের পার্থক্য অনুধাবন করা যায়। বর্তমান সময়ে অ্যাপসটি অ্যানড্রয়েড ফোন রুট করার জন্য খুবই সহজ এবং জনপ্রিয়। প্রথম দিকে শুধু Chinese Version ছিল কিন্তু গত এক বছর ধরে English Version পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র এক ক্লিক করেই অ্যাপসটির মাধ্যমে আপনার ফোনটি রুট করতে পারবেন। এন্ড্রয়েড এর প্রায় সকল আপডেট ভার্সন পর্যন্ত অ্যাপসটির মাধ্যমে রুট করা যায়। অ্যাপসটির ডেভেলপারদের ভাষ্যমতে অ্যাপসটির মাধ্যমে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় এক লক্ষের বেশী ধরনের ডিভাইস রুট করা যায়।
প্রথমে এখানে ক্লিক করে Kingroot অ্যানড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করুন।
- ইনস্টল করার পর অ্যাপটি ওপেন করলে কিছুক্ষনের মধ্যেই আপনার ফোনটি স্ক্যান হবে এবং নিচের ছবিটির মতো দেখাবে। রুট করার সময় অবশ্যই আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট কানেকশনটি চালু থাকা প্রয়োজন।
- এখানের নীল কালারের Try it অপশনে ক্লিক করলে ফোনের রুট Status Verify শুরু হবে।
- উপরের ছবিতে দেখুন ফোনের Root Status Verify চলছে।
- উপরের ছবির নীল রঙের Start Root অপশনে ক্লিক করলে মোবাইল রুট হওয়া শুরু হবে।
- উপরের ছবিটিতে ১০০% হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এটি শেষ হতে ৩/৪ মিনিট সময় লাগতে পারে। ১০০% হয়ে গেলে নিচের ছবির মত Success মেসেজ দেখাবে।
- এখন আপনার মোবাইলটি Restart দিন। এতটুকু ঠিকঠাকভাবে করলেই দ্বিতীয় পদ্ধতিতে আপনার মোবাইলটি রুট হয়ে যাবে।
- শুধুমাত্র KingUser টি রেখে বাকী সব Extra অ্যাপ Uninstall করে ফেলতে পারেন।
এন্ড্রয়েড ফোন আনরুট করার নিয়মাবলী
পদ্ধতি-১ঃ যারা কিংরুট ব্যবহার করেন তারা Kingroot>General settings>Uninstall Kingroot>Clear root হতে মোবাইল ফোন আনরুট করতে পারবেন।
পদ্ধতি-২ঃ মোবাইল রুট করার পর ফোনে SuperSU ইনস্টল হলে SuperSU অ্যাপ থেকে Settings>Full Unroot ব্যবহার করে মোবাইল ফোন আনরুট করা যাবে।
পদ্ধতি-৩ঃ গুগল প্লে-স্টোরে Universal Unroot নামে একটি অ্যাপ রয়েছে। আপনি চাইলে প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইনস্টল করে মোবাইল আনরুট করতে পারেন। এই অ্যাপটি ইনস্টল করে ওপেন করলেই মোবাইল আনরুট করার অপশন পেয়ে যাবেন। আনরুট বাটনে ক্লিক করে নিশ্চিত করলেই অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে আপনার অ্যানড্রয়েড ফোন আনরুট হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ মোবাইল রুট করার এই প্রক্রিয়া গুলো টিউটোরিয়াল বেসিস দেখানো হয়েছে। নিয়মিত এই রুটের অ্যাপস গুলোর পলিসি পরিবর্তিত হয়। তাই ভালোভাবে পলিসি গুলো পড়ে তারপর রুট করবেন। অন্যথায় কোনো সমস্যা হলে টেক ভান্ডার দায়ী থাকবে না।