শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধ করার সুপারিশ করেছে। গেম দুটিতে তরুণদের আসক্তির কারণে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে তা বন্ধের সুপারিশ করা হয়। গেম দু’টি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও জরুরি সকল পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গেম দুটি যদি দেশে বন্ধ করার পর কেউ যেন ভিপিএন ব্যবহার করেও কেউ খেলতে না পারে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিটিসিএল। সম্প্রতি নেপালের আদালত পাবজি নিষিদ্ধ করে। এ গেম খেলার ওপর ভারতের গুজরাটেও গতবছর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। গেমটি খেলার জন্য কয়েকবার বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ান গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের অনলাইন ভিডিও চালু হয় ২০১৭ সালে। এরপর থেকে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এই গেমটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে টেম্পল রান, এংরি বার্ড, ক্যান্ডি ক্রাশের মতো গেমগুলোকে পেছনে ফেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশ সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেমের তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নেয় পাবজি গেম।
অন্যদিকে চায়না প্রতিষ্ঠান গেরেনা ২০১৯ সালে তৈরি করা ফ্রি ফায়ার একইভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে করোনা মহামারির ফলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা এসব গেমে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।
সাইবার-৭১ এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ আব্দুল্লাহ আল জাবের জানিয়েছেন,পাবজি ও ফ্রি ফায়ার আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আপাতত যতটুকু তথ্য পেয়েছি গেম দুটি বন্ধের বিষয়ে এখনও অফিশিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর এমনটা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কোনো সমস্যা হলে সেটা নিয়ে কাজ করে সমাধান করতে হবে। বন্ধ করে দিয়ে নয়।
আব্দুল্লাহ আল জাবের জানান, এ বিষয়ে জনগনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। হুট করে কিছু বন্ধ করে দেওয়া অনেকটাই অসম্ভব। যেখানে টেকনোলজির বিপ্লব হচ্ছে সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ নয়। প্রতিটি জিনিসের ভালো বা খারাপ দিক আছে। এটাই নিয়ম। এজন্য বন্ধ করে না দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার।
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকেও অনেক বিষয় আছে। যেমন একটি অ্যাপ ব্লক করলে সেটি আবার ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যেটা একটা অবৈধ পন্থা। বৈধ পন্থা বন্ধের পরে যদি সবাই অবৈধ পথে হাঁটে তাহলে বন্ধ করে লাভ কী?
জাবেরের তথ্যানুসারে, কিছু ফায়ারওয়াল সিস্টেম আছে যার মাধ্যমে ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে এমন প্রযুক্তি আসেনি। তাই অ্যাপ বন্ধ করলেই যে বাংলাদেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ হবে তার কোনো অনিশ্চিত।
এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘যদি পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম বন্ধের জন্য শত শত দাবি ওঠে, আবার তা চালু রাখার জন্যও দাবি ওঠে। আমি কোন দাবিটা শুনব? আমি আজ গেম দুটি বন্ধ করে দেব, কিন্তু ভিপিএন কে বন্ধ করবে? আমরা ফেসবুক বন্ধ করেছিলাম, কিন্তু ভিপিএন দিয়ে অনেকেই ফেসবুক চালিয়েছে।’
তিনি আরও বলেছেন, এখন সবার কাছেই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম আছে, সেটা ব্যবহার করুন। কোনো কিছুই ইন্টারনেটের জগতে বন্ধ করা যায় না। মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা—কোনো সমাধান হতেই পারে না। কতটুকু গেম খেলা উচিত, কতটুকু বাইরে যাওয়া উচিত, কতটুকু আড্ডা দেয়া উচিত, কতটুকু ঘরে থাকা উচিত; আপনি যদি আপনার সন্তানকে এটুকু বুঝাতে না পারেন,এটা অভিভাবকদের ব্যর্থতা।’